Hi

ঢাকা ১০:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিকের দুর্বলতা নয়, সাহস-সততা-সুরক্ষাই হোক বাঁচার পথ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৪৯:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
  • ৮৩ Time View

 বিশেষ প্রতিনিধিঃ গত এক বছরে শুধু গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত হয়েছেন দুই শতাধিক সাংবাদিক। পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রেই সত্যনিষ্ঠ-বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকদের উপর চলছে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শারীরিক নির্যাতন। সম্প্রতি গাজীপুরের সাংবাদিক তুহিন হত্যা কিংবা প্রবীণ সাংবাদিক বিভু রঞ্জন সরকারের নিথর দেহ মেঘনায় ভেসে ওঠা—এসবই প্রমাণ করে, সংবাদকর্মীরা আজ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কাজ করছেন। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। তারা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে রাষ্ট্র ও সমাজকে সঠিক পথে এগিয়ে নেন। একটি দেশের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা কোন দিকে যাবে, রাষ্ট্রের কর্মকৌশল কেমন হবে—এসব প্রশ্নে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অথচ পরিতাপের বিষয়, সাংবাদিকরাই কখনো সঠিক মর্যাদা, অধিকার ও সুরক্ষা পাননি। এখানে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর দুর্বলতা যেমন আছে, তেমনি অনেক সাংবাদিক নিজেরাও নৈতিকতা বিসর্জন দিয়েছেন। কেউ কেউ রাজনৈতিক কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, পেশাগত দায়িত্বের বদলে স্বার্থসংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। এ কারণে পেশার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সাংবাদিকতায় টিকে থাকতে হলে কেবল খবর সংগ্রহ করলেই হবে না; প্রয়োজন আত্মরক্ষা, মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও নৈতিকতায় দৃঢ় থাকা। -সংঘাত, দুর্যোগ, আন্দোলন, অপরাধস্থল—যেখানেই সাংবাদিকদের যেতে হয়, সেখানেই লুকিয়ে থাকে মৃত্যুঝুঁকি। তাই হেলমেট, মাস্ক, নিরাপত্তা জ্যাকেটসহ প্রটেক্টিভ গিয়ার ব্যবহার অপরিহার্য। বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে শান্ত থাকা ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা শিখতে হবে। একইসঙ্গে ঝুঁকি মোকাবিলায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ জরুরি। ভয়, হুমকি, কাজের চাপ অনেক সাংবাদিককে ভেঙে দেয়। তাই কাউন্সেলিং, বিশ্রাম এবং পরিবার-সহকর্মীদের সমর্থন নেওয়া অপরিহার্য। অনলাইন হুমকি ও সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতেও সাংবাদিকদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। সাংবাদিকের মর্যাদা,সাংবাদিক সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি। কিন্তু প্রকৃত মর্যাদা অর্জনের জন্য—তাকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে,গুজব ও পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ এড়িয়ে চলতে হবে, জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ১.√ সত্যনিষ্ঠা : সংবাদ প্রকাশের আগে শতভাগ যাচাই জরুরি। ভুয়া বা অর্ধসত্য প্রচার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে। ২.√ নিরপেক্ষতা : রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শের হাতিয়ার হওয়া যাবে না। সাংবাদিকের একমাত্র লক্ষ্য সত্য। ৩.√ মানবিকতা : দুর্ঘটনা বা অপরাধসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের সময় ভুক্তভোগীর গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ৪.√ দায়বদ্ধতা : কোনো ভুল সংবাদ প্রকাশ হলে তা সংশোধন ও জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়াই নৈতিক দায়িত্ব। ১•√নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিতে হবে—ডেটা জার্নালিজম, ফ্যাক্ট-চেকিং, নতুন প্রযুক্তি বিষয়ে। ২.√নিজেকে হালনাগাদ রাখতে হবে—দেশি-বিদেশি সংবাদ নিয়মিত অধ্যয়ন করে। ৩.√ পেশাগত সংগঠনে সক্রিয় থাকতে হবে—অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হতে। ৪.√ সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখতে হবে—শুধু সংবাদ নয়, সামাজিক উন্নয়নেও অংশ নিয়ে। ৫.√আত্মসম্মান রক্ষা করতে হবে—অনৈতিক চাপ বা প্রলোভনের কাছে আত্মসমর্পণ করা যাবে না। সাংবাদিকতা কোনো চাকরি নয়, এটি জাতি ও রাষ্ট্রের প্রতি এক অঙ্গীকার। একজন সাংবাদিক যদি নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন, তবে তিনি দীর্ঘদিন টিকে থাকবেন। যদি মর্যাদা অর্জন করতে পারেন, তবে সমাজ তাকে শ্রদ্ধা করবে। আর যদি নৈতিকতায় অবিচল থাকেন, তবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা অটুট থাকবে। সত্যের আদর্শ কেবল তিনিই প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন, যিনি সুরক্ষা, মর্যাদা ও নৈতিকতায় সমৃদ্ধ। (এম নজরুল ইসলাম খান,-লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট)

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ভালুকায় বসত বাড়ীতে হামলা ভাংচুর লুটপাট আহত ৩

সাংবাদিকের দুর্বলতা নয়, সাহস-সততা-সুরক্ষাই হোক বাঁচার পথ

Update Time : ০৫:৪৯:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

 বিশেষ প্রতিনিধিঃ গত এক বছরে শুধু গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত হয়েছেন দুই শতাধিক সাংবাদিক। পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রেই সত্যনিষ্ঠ-বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকদের উপর চলছে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শারীরিক নির্যাতন। সম্প্রতি গাজীপুরের সাংবাদিক তুহিন হত্যা কিংবা প্রবীণ সাংবাদিক বিভু রঞ্জন সরকারের নিথর দেহ মেঘনায় ভেসে ওঠা—এসবই প্রমাণ করে, সংবাদকর্মীরা আজ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কাজ করছেন। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। তারা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে রাষ্ট্র ও সমাজকে সঠিক পথে এগিয়ে নেন। একটি দেশের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা কোন দিকে যাবে, রাষ্ট্রের কর্মকৌশল কেমন হবে—এসব প্রশ্নে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অথচ পরিতাপের বিষয়, সাংবাদিকরাই কখনো সঠিক মর্যাদা, অধিকার ও সুরক্ষা পাননি। এখানে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর দুর্বলতা যেমন আছে, তেমনি অনেক সাংবাদিক নিজেরাও নৈতিকতা বিসর্জন দিয়েছেন। কেউ কেউ রাজনৈতিক কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, পেশাগত দায়িত্বের বদলে স্বার্থসংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। এ কারণে পেশার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সাংবাদিকতায় টিকে থাকতে হলে কেবল খবর সংগ্রহ করলেই হবে না; প্রয়োজন আত্মরক্ষা, মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও নৈতিকতায় দৃঢ় থাকা। -সংঘাত, দুর্যোগ, আন্দোলন, অপরাধস্থল—যেখানেই সাংবাদিকদের যেতে হয়, সেখানেই লুকিয়ে থাকে মৃত্যুঝুঁকি। তাই হেলমেট, মাস্ক, নিরাপত্তা জ্যাকেটসহ প্রটেক্টিভ গিয়ার ব্যবহার অপরিহার্য। বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে শান্ত থাকা ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা শিখতে হবে। একইসঙ্গে ঝুঁকি মোকাবিলায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ জরুরি। ভয়, হুমকি, কাজের চাপ অনেক সাংবাদিককে ভেঙে দেয়। তাই কাউন্সেলিং, বিশ্রাম এবং পরিবার-সহকর্মীদের সমর্থন নেওয়া অপরিহার্য। অনলাইন হুমকি ও সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতেও সাংবাদিকদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। সাংবাদিকের মর্যাদা,সাংবাদিক সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি। কিন্তু প্রকৃত মর্যাদা অর্জনের জন্য—তাকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে,গুজব ও পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ এড়িয়ে চলতে হবে, জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ১.√ সত্যনিষ্ঠা : সংবাদ প্রকাশের আগে শতভাগ যাচাই জরুরি। ভুয়া বা অর্ধসত্য প্রচার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে। ২.√ নিরপেক্ষতা : রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শের হাতিয়ার হওয়া যাবে না। সাংবাদিকের একমাত্র লক্ষ্য সত্য। ৩.√ মানবিকতা : দুর্ঘটনা বা অপরাধসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের সময় ভুক্তভোগীর গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ৪.√ দায়বদ্ধতা : কোনো ভুল সংবাদ প্রকাশ হলে তা সংশোধন ও জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়াই নৈতিক দায়িত্ব। ১•√নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিতে হবে—ডেটা জার্নালিজম, ফ্যাক্ট-চেকিং, নতুন প্রযুক্তি বিষয়ে। ২.√নিজেকে হালনাগাদ রাখতে হবে—দেশি-বিদেশি সংবাদ নিয়মিত অধ্যয়ন করে। ৩.√ পেশাগত সংগঠনে সক্রিয় থাকতে হবে—অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হতে। ৪.√ সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখতে হবে—শুধু সংবাদ নয়, সামাজিক উন্নয়নেও অংশ নিয়ে। ৫.√আত্মসম্মান রক্ষা করতে হবে—অনৈতিক চাপ বা প্রলোভনের কাছে আত্মসমর্পণ করা যাবে না। সাংবাদিকতা কোনো চাকরি নয়, এটি জাতি ও রাষ্ট্রের প্রতি এক অঙ্গীকার। একজন সাংবাদিক যদি নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন, তবে তিনি দীর্ঘদিন টিকে থাকবেন। যদি মর্যাদা অর্জন করতে পারেন, তবে সমাজ তাকে শ্রদ্ধা করবে। আর যদি নৈতিকতায় অবিচল থাকেন, তবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা অটুট থাকবে। সত্যের আদর্শ কেবল তিনিই প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন, যিনি সুরক্ষা, মর্যাদা ও নৈতিকতায় সমৃদ্ধ। (এম নজরুল ইসলাম খান,-লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট)