শিরোনামঃ
পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে ভোক্তা অধিকারের গুরুত্ব
-
Reporter Name
- Update Time : ১২:১৪:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
- ২০ Time View

মাওলানা শামীম আহমেদ সাংবাদিক, ইসলামিক কলামিস্ট: ভোক্তা বলা হয়, যিনি তার নিজের পছন্দ বা প্রয়োজনে পণ্যসামগ্রী বা সেবা ক্রয় করেন এবং তা নিঃশেষ করেন। সুতরাং ভোক্তা মূলত তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য পণ্য বা পরিসেবা ক্রয় করেন; উৎপাদন বা পুনরায় বিক্রয়ের জন্য নয়। ভোক্তা হলো, বিক্রয়চক্রের বা চেইনের শেষ ব্যবহারকারী। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে যে কোনো পর্যায়ের ক্রেতা বা সেবাগ্রহীতাকে ভোক্তা বলা হয়। তিনি সর্বশেষ ব্যবহারকারী হওয়া বা না হওয়া এখানে বিবেচ্য নয়। একটি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ভোক্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ, ভোক্তার চাহিদা ছাড়া উৎপাদকদের উৎপাদনের প্রয়োজন বা প্রেরণা থাকে না। ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা এবং সম্পদ বণ্টনে অসমতা সৃষ্টি হবে। ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারীর মর্যাদা সব শ্রেণির মানুষ কোনো না কোনো পর্যায়ে ভোক্তা। কিন্তু সবাই উদ্যোক্তা বা উৎপাদনকারী নয়। তবে ভোক্তার প্রাপ্য মূলত মুষ্টিমেয় উদ্যোক্তা ও বিক্রেতার হাত হয়ে মানুষের মাঝে বিতরণ হয়। মানুষের কাছে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছানোর মাধ্যম তারা। তাই এ সেবা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও মর্যাদাপূর্ণ। ব্যবসায়ীর ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেন, ‘সত্যবাদী, সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহিদদের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি : ১২০৯)। উৎপাদন করা আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তিনি তোমাদের ভূমি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে বসবাস উপযুক্ততা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ (সুরা হুদ : ৬১)। এই বসবাস উপযুক্ততার অর্থ হলো, উৎপাদন ও মানুষের প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করা। তা ছাড়া অনেক আয়াত ও হাদিসে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও এর জন্য শ্রম দেওয়াকে প্রশংসা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আইন ও নিয়মকানুন দ্বারা তাদের আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কারণ, এ শ্রেণির কোনো অনিয়ম বা অনৈতিকতার ফলে ভোক্তা শ্রেণি তথা মানবসমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভোক্তা তার ন্যায্যটা পাওয়ার অধিকার রাখে। তাদের এ অধিকারকে বলা হয় ‘ভোক্তাদের অধিকার’। কনজিউমার রাইটস বা ভোক্তা অধিকার একটি মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার। তাদের এ অধিকার সম্পর্কে সর্বপ্রথম সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্ত আইন দিয়েছে ইসলাম। যা ফিকহের গ্রন্থাবলিতে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। ইসলামে অধিকার বাস্তবায়নের স্বতন্ত্র নীতি রয়েছে। যে নীতিতে ইসলাম অনন্য ও অতুলনীয়। এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করে দেশীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন নিয়ে পর্যালোচনা করা হলো। একই সঙ্গে এ ক্ষেত্রে ইসলামের অনন্যতার কিছু দিক তুলে ধরা হলো ইসলাম সবসময় ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে। নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এর যে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র কৌশল রয়েছে, তার কয়েকটি দিক হলো- এক. ইসলাম অধিকার প্রতিষ্ঠার আগে মানবতার চেতনাকে জাগ্রত করে। হাদিসে এসেছে, ‘সব মোমিন এক দেহের মতো। যার কোনো অঙ্গ ব্যথিত হলে পুরো দেহ তার জন্য রাত জাগে এবং জ্বরাক্রান্ত হয়।’ (আল মুজামুল কাবির, তাবারানি : ৫২)। দুই. প্রতিটি বিবেককে একজন শাসকের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। অর্থাৎ তাকওয়ার শিক্ষা ও আল্লাহভীতি অন্তরে জাগ্রত করে। কারণ মানুষ সব ধরনের আইন ফাঁকি দিতে পারে; কিন্তু নিজের বিবেককে ফাঁকি দিতে পারে না। সেখানে আল্লাহর উপস্থিতি-চেতনা তাকে নীতিবান ও আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকতে বাধ্য করে। এর চমৎকার উদাহরণ হলো, ওমর (রা.)-এর যুগে একজন নারীর প্রসিদ্ধ ঘটনা। তিনি শেষ রাতে দুধ দোহনের পর বাজারে নেওয়ার আগে মেয়েকে তাতে পানি মেশাতে বললেন। মেয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কথা বলল। মা বললেন, ‘এ সময় তো প্রশাসন এখানে নেই।’ মেয়ে প্রতিত্তোরে বলল, ‘আল্লাহ তো এখানে আছেন। তিনি দেখছেন।’ ভেজালমুক্ত খাদ্য পরিবেশনের এটি অনন্য নজির। তিন. অন্যের অধিকার যথাযথভাবে প্রদানের দায়বদ্ধতা। নিজের অধিকার ছাড় দিয়ে হলেও অন্যের অধিকার যথাযথ দেওয়ার যে শিক্ষা ইসলাম প্রদান করে, তার নজির কোথাও নেই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেক হকদারকে তার প্রাপ্য পরিপূর্ণভাবে প্রদান করো।’ (বোখারি : ১৯৬৮)। যার ফলে মুসলিম সমাজে নিজের চেয়ে অন্যের অধিকারের ব্যাপারে সবাই সচেতন থাকে এবং সবার ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত হয় অপরদিকে আধুনিক সভ্য পৃথিবীতে সবাই নিজের অধিকার আগে চায়। নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন করা হয়। অন্যের অধিকারের প্রতি গুরুত্বটা সেভাবে দেওয়া হয় না। ফলশ্রুতিতে স্বার্থপর ও অসহিষ্ণু এক জাতির বিশ্রী চেহারা সমাজে দেখতে হচ্ছে। একই চিত্র ভোক্তা অধিকার নিয়েও। পদে পদে ভোক্তাদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। সঠিকভাবে মূল্য পরিশোধ করার পরও তাকে সঠিক পণ্য, সঠিক সেবা দেওয়া হয় না আধুনিক সভ্য পৃথিবী ভোক্তার অধিকার সম্পর্কে অবগত হয়েছে অনেক পরে; মাত্র কয়েক বছর আগে। অথচ ইসলাম প্রায় সাড়ে ১৪০০ বছর আগে মানুষের মৌলিক এ অধিকার নিয়ে সবিস্তারে নির্দেশনা ও আইন দিয়েছে। ১৯৬২ সালের ১৫ মার্চ ওই সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি কংগ্রেসে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে বক্তৃতা দেন। সেখানে তিনি ভোক্তাদের ৪টি অধিকারের কথা বলেন। নিরাপত্তার অধিকার, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার, পছন্দের অধিকার এবং অভিযোগ প্রদানের অধিকার; যা পরবর্তী সময়ে ভোক্তা অধিকার আইন নামে পরিচিতি পায়। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের মাধ্যমে জাতিসংঘ ভোক্তা অধিকার রক্ষার নীতিমালায় কেনেডি বর্ণিত চারটি মৌলিক অধিকারকে আরও বিস্তৃত করে অতিরিক্ত আরও আটটি মৌলিক অধিকার সংযুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই কনজুমার্স ইন্টারন্যাশনাল এসব অধিকারকে সনদে অন্তর্ভুক্ত করে। কেনেডির ভাষণের দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৫ মার্চকে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
Tag :
ইসলাম
জনপ্রিয়