Hi

ঢাকা ০৯:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১১ বিঘা আলু গম সরিষা হালচাষ দিয়ে নষ্ট করলো প্রতিপক্ষ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:০৪:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৭১ Time View

ইমাম হাসান জুয়েল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
কোঁদাল ও হাত দিয়ে জমির নিচ থেকে আলুর বীজ খুঁজছে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা। অথচ মাত্র ১৫ দিন আগেই এই জমিতে বপন করা হয় আলুর বীজ। প্রায় ৪ বিঘা জমিতে সার, বীজ, শ্রমিক মিল খরচ হয় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয় কৃষক রজিবুল হকের। আশা ছিল, সেখান থেকে ভালো লাভের। কিন্তু জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে গ্রামের কিছু লোকজন শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ দেয় আলুর জমিতে। এতেই স্বপ্নভঙ্গ হয় কৃষকের।

শুধু আলুর জমিতেই নয়, মাসখানেকের মধ্যেই বপন করা গম, সরিষা ও ধানের বীজতলা মিলে মোট ১১ বিঘা জমিতে হালচাষ দিয়ে নষ্ট করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার দুলাহার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে৷ এতে চরম দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। ধার ও ঋণ করে চাষাবাদের পর এমন নির্মমতায় শেষ সম্বল হারিয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা। এতে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি তাদের৷

কৃষকদের দাবি, গত ১০ বছর ধরে তারা এই জমি চাষাবাদ করছেন৷ কিন্তু হঠাৎ করেই গ্রামের সালাউদ্দিন, রবি, পিন্টু, ইউসুফ, তেমুরসহ ১৫-২০ জন লোক এসে নিজেদের জমি দাবি করে ফসলের উপর ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ দেয়। এসময় কৃষকরা বাধা দিতে গেলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে থাকা লোকজন ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

কৃষক রজিবুল হক জানান, শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ করেই ১৫-২০ লোক দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে জমিতে ট্রাক্টর দিতে যায়। আমরা ফসল বাঁচানোর জন্য তাদেরকে অনেক কাকুতি-মিনতি করি। কিন্তু উল্টো আমাদেরকেই নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দেখায়। বাধ্য হয়েই দূরে দাঁড়িয়ে থেকে আলুর জমিতে হালচাষ দিতে দেখেছি আর কেঁদেছি। পাশাপাশি আমার ধানের বীজতলাও সম্পূর্ণভাবে হালচাষ দিয়ে নষ্ট করেছে তারা। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কি করব, কি খাব কিছুই বুঝতে পারছি না।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কেরামত আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে জমিটি ফুরান (ইজারা) নিয়ে চাষবাদ করি। কোনদিন কেউ বাধা দেয়নি বা সমস্যায় পড়িনি। ধান ঘরে তুলে ৬ বিঘা জমিতে গম চাষবাদ করেছিলাম। জমিতে ৫-৬ ইঞ্চি বড় আকার ধারন করেছিল গম। কিন্তু সেই গমের উপর দিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে নষ্ট করলো তারা। তাদেরকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম, ফসল উৎপাদন করতে দেন, এরপর আপনারা নিয়ে যাবেন। কিন্তু না শুনে নষ্ট করে দিল। আমি গতকাল থেকে বাসায় যেতে পারছি না। অনেক কষ্টে গড়ে তোলা ফসল চোখের সামনে নষ্ট করলেও আমি রক্ষা করতে পারিনি।

জমির অন্যতম মালিক আতাউর রহমান বলেন, গত ১০০ বছর ধরে আমরা এই জমি চাষাবাদ করি। আমার দাদার থেকে বাবা এরপর আমরা পৈতৃক সূত্রে এই জমি পেয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা জমির মালিকানা দাবি করে ট্রাক্টর দিয়ে সব ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা চাই, এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
হালচাল দেয়া ১১ বিঘা জমিতে তিন জন কৃষক ফসল চাষাবাদ করেছিলেন৷ এনিয়ে শুক্রবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এবিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

তামাক মুক্ত দিবস উপলক্ষে অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে যাত্রিদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেন -আব্দুল কুদ্দুস

১১ বিঘা আলু গম সরিষা হালচাষ দিয়ে নষ্ট করলো প্রতিপক্ষ

Update Time : ০৭:০৪:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

ইমাম হাসান জুয়েল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
কোঁদাল ও হাত দিয়ে জমির নিচ থেকে আলুর বীজ খুঁজছে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা। অথচ মাত্র ১৫ দিন আগেই এই জমিতে বপন করা হয় আলুর বীজ। প্রায় ৪ বিঘা জমিতে সার, বীজ, শ্রমিক মিল খরচ হয় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয় কৃষক রজিবুল হকের। আশা ছিল, সেখান থেকে ভালো লাভের। কিন্তু জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে গ্রামের কিছু লোকজন শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ দেয় আলুর জমিতে। এতেই স্বপ্নভঙ্গ হয় কৃষকের।

শুধু আলুর জমিতেই নয়, মাসখানেকের মধ্যেই বপন করা গম, সরিষা ও ধানের বীজতলা মিলে মোট ১১ বিঘা জমিতে হালচাষ দিয়ে নষ্ট করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার দুলাহার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে৷ এতে চরম দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। ধার ও ঋণ করে চাষাবাদের পর এমন নির্মমতায় শেষ সম্বল হারিয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা। এতে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি তাদের৷

কৃষকদের দাবি, গত ১০ বছর ধরে তারা এই জমি চাষাবাদ করছেন৷ কিন্তু হঠাৎ করেই গ্রামের সালাউদ্দিন, রবি, পিন্টু, ইউসুফ, তেমুরসহ ১৫-২০ জন লোক এসে নিজেদের জমি দাবি করে ফসলের উপর ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ দেয়। এসময় কৃষকরা বাধা দিতে গেলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে থাকা লোকজন ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

কৃষক রজিবুল হক জানান, শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ করেই ১৫-২০ লোক দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে জমিতে ট্রাক্টর দিতে যায়। আমরা ফসল বাঁচানোর জন্য তাদেরকে অনেক কাকুতি-মিনতি করি। কিন্তু উল্টো আমাদেরকেই নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দেখায়। বাধ্য হয়েই দূরে দাঁড়িয়ে থেকে আলুর জমিতে হালচাষ দিতে দেখেছি আর কেঁদেছি। পাশাপাশি আমার ধানের বীজতলাও সম্পূর্ণভাবে হালচাষ দিয়ে নষ্ট করেছে তারা। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কি করব, কি খাব কিছুই বুঝতে পারছি না।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কেরামত আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে জমিটি ফুরান (ইজারা) নিয়ে চাষবাদ করি। কোনদিন কেউ বাধা দেয়নি বা সমস্যায় পড়িনি। ধান ঘরে তুলে ৬ বিঘা জমিতে গম চাষবাদ করেছিলাম। জমিতে ৫-৬ ইঞ্চি বড় আকার ধারন করেছিল গম। কিন্তু সেই গমের উপর দিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে নষ্ট করলো তারা। তাদেরকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম, ফসল উৎপাদন করতে দেন, এরপর আপনারা নিয়ে যাবেন। কিন্তু না শুনে নষ্ট করে দিল। আমি গতকাল থেকে বাসায় যেতে পারছি না। অনেক কষ্টে গড়ে তোলা ফসল চোখের সামনে নষ্ট করলেও আমি রক্ষা করতে পারিনি।

জমির অন্যতম মালিক আতাউর রহমান বলেন, গত ১০০ বছর ধরে আমরা এই জমি চাষাবাদ করি। আমার দাদার থেকে বাবা এরপর আমরা পৈতৃক সূত্রে এই জমি পেয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা জমির মালিকানা দাবি করে ট্রাক্টর দিয়ে সব ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা চাই, এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
হালচাল দেয়া ১১ বিঘা জমিতে তিন জন কৃষক ফসল চাষাবাদ করেছিলেন৷ এনিয়ে শুক্রবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এবিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।